আয় করুন

ফরেক্স, বৈদেশিক মুদ্রার বেচা-কেনা

ফরেক্স, বৈদেশিক মুদ্রার-ক্রয় বিক্রয়, এটি বুঝবার জন্য আপনাকে এ লিখাটি ভালভাবে পড়তে হবে।বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের ভিতর ইন্টারনেটের সহজ এবং সফল ব্যাবহার চালু হবার পর "ফরেক্স" অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রার বেচা-কেনার সুযোগটি সাধারণ মানুষের হাতের লাগালে চলে আসে। এ ব্যবসাটি যদিও ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যাবহার চালু হবার আগে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে ছিলনা, কেননা তখন যে কেউ ইচ্ছে করলেই বৈদেশিক মুদ্রার কেনা-বেচার কাজটি করতে পারতোনা। এখন চাইলে ঘরে বসে যে কেউ একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার সেট এবং ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই করতে পারে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার বেচাকেনা করার আগে এ সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। কেননা, এটি একটি অভিজ্ঞতা নির্ভর ব্যবসা, আপনি এবিষয়ে যত জানবেন ততই ভাল করতে পারবেন। অপর দিকে, এ ব্যবসাটি না জেনে বা না শিখে এখানে টাকা বিনিয়োগ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।
আমরা জানি বিভিন্ন দেশের কারেন্সি বা টাকা বা বিনিময় মুদ্রা ভিন্ন ভিন্ন হয়, যেমন: আমাদের দেশের কারেন্সি হল টাকা, তেমনি ভারতে রুপি আবার আমেরিকার টাকার নাম ডলার এবং ইংল্যান্ডের পাউন্ড ইত্যাদি।
বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয় কিভাবে করবেন এখন সেটা দেখা যাক, আমরা সবাই জানি কোন একটি দেশের কারেন্সি বা বিনিময় মুদ্রা অন্য একটি দেশ থেকে ভিন্ন হয় এবং এগুলোর মূল্য একটির বিপরীতে অন্যটি সবসময় একরকম থাকেনা, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডের সাথে উঠা-নামা করে। ধরুন, এখন এক ডলারের বিনিময়ে আপনি ৮০ টাকা পাচ্ছেন, কিন্তু এটি স্থির নয়, হয়ত কিছুদিন পর এটির দাম বেড়ে বা কমে যেতে পারে। আপনার যদি কিছু ডলার কেনা থাকে তাহলে দাম বাড়লে বিক্রি করে আপনি বেশি টাকা পাচ্ছেন, অন্যদিকে দাম কমলে আপনি কম টাকা পাচ্ছেন। বিষয়টি এরকম, প্রত্যেক দেশের কারেন্সির মূল্য এরকম উঠা-নামা করে, অর্থাৎ দাম বাড়ে বা কমে। এখন, কোন একটি দেশের কারেন্সি আপনি ক্রয় করলেন, এবং দাম বাড়লে বিক্রি করলেন, এটাই আসলে বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয় এবং এটাই হল ফরেক্স ব্যবসা।
কিন্তু অনলাইনে এ ব্যবসা করতে চাইলে আপনাকে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় জানতে হবে। কেননা ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে ফরেক্স-এ বিনিয়োগ না করাই ভাল।অনেকেই ফরেক্স ব্যবসার শুরুতেই কিছুটা সাফল্য পেয়ে বেশি টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন, এতে জ্ঞান স্বল্পতার কারণে কোন এক পর্যায়ে সর্বস্ব হারায়ে ফেলেন।তাই, এরকম ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে আপনাকে অবশ্যই ভালভাবে ফরেক্স ব্যবসা সম্পর্কে জানতে হবে।

ফরেক্স-এ কি নিয়ে ট্রেড করা হয়

অনেকের কাছে ফরেক্স ব্যবসা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকে। আসলে এখানে কি নিয়ে ব্যবসা করা হয় আগে সেটি পরিষ্কার থাকতে হবে। আপনি যখন কোন কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করেন, তখন এর অর্থ দাঁড়ায় আপনি ঔই কোম্পানির একটি ক্ষুদ্র অংশের মালিকানা ক্রয় করেছেন। অর্থাৎ কোম্পানিটির উন্নতির সাথে সাথে আপনার শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পায়, অবনতি হলে শেয়ারের দাম কমে যাবে। ঠিক একইভাবে, আপনি যখন কোন দেশের কারেন্সি ক্রয় করেন তখন সেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে ক্রয় করি। এর অর্থ হল, ঔই দেশ যখন উন্নতি করে তখন ঔই দেশের মুদ্রার দাম বাড়ে, একই ভাবে দেশের অর্থনৈতিক অবনতি হলে ঔই দেশের মুদ্রার দামও কমে যায়। তাহলে পরিষ্কার হয়ে গেল, মুদ্রা কেনা-বেচার মাধ্যমে আপনার লাভ বা ক্ষতি কিভাবে ঘটে।

কারেন্সি পেয়ার আসলে কি

যেখানে শেয়ার ব্যবসায় শেয়ারের মূল্য সেই দেশের কারেন্সির একক দিয়ে নির্ধারণ করা হয়, যেমন: বাংলাদেশে একটি শেয়ারের মূল্য টাকা দিয়ে নির্ধারণ করা হয়। শেয়ারের দাম বাড়লে বা কমলে বলা হয়, শেয়ারের দাম কত টাকা বাড়ল বা কমলো এমনটি।
কিন্তু ফরেক্স-ট্রেডে একটি কারেন্সি অন্য কারেন্সির তুলনায় কতটা বাড়ল বা কমলো সেটা নির্দেশ করে। ঠিক একারণেই এখানে ব্যবসা করতে আপনার প্রয়োজন হয় একটি "কারেন্সি পেয়ার" এর সাথে তুলনা করে লাভ-ক্ষতি হিসাব করা। অর্থাৎ একটি কারেন্সি পেয়ারের তুলনামূলক মূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি। আর কারেন্সি পেয়ার হল, দু'টি দেশের দু'টি ভিন্ন কারেন্সি। একটি কারেন্সি অন্য একটি কারেন্সির তুলনায় দাম কমলো না বাড়ল সেটিকে নজরে রেখে আপনাকে ব্যবসা করতে হবে। অর্থাৎ আপনার ক্রয়কৃত কারেন্সির উপর আপনার লাভ-ক্ষতি নির্ধারণ হয়, এক ডলারের বিপরীতে কত ইউএসডি পাচ্ছেন সেটি।   
এখন একটি কারেন্সি পেয়ারের উদাহরণ দেওয়া যাক, যেমন: EUR/USD যদি একটি কারেন্সি পেয়ার ধরা হয় তাহলে, এক EUR/USD এর বিপরীতে আপনি পাচ্ছেন 1.6625 ডলার।অর্থাৎ এক ইউরো বিক্রি করে আপনি 1.6625 ইউএসডি (ইউএসডি =আমেরিকার টাকা=ডলার) পাচ্ছেন, এখানে কারেন্সি পেয়ারের যেটি আপনার কাছে থাকে সেটি প্রথমে এবং বিনিময় বা বিক্রি করে যে টাকা পাচ্ছেন সেটি পরে থাকবে। আশা করি এবার কারেন্সি পেয়ার সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া গেল।

পিপস বলতে যা বুঝায়

আপনি যখন কোন কারেন্সি পেয়ার নিয়ে ব্যবসা করবেন, তখন ওই কারেন্সির দশমিকের পরে আরও চার ঘর পর্যন্ত হিসাব করতে হয়। দশমিকের পরের চতুর্থ সংখ্যার প্রতি এক একক পরিবর্তন হলে বা উঠা-নামা করলে তাকে PIP "পিপ'' বলে। আর এক এককের বেশি হলে তাকে PIPS ( পিপস) বলে। এখানে একটি উদাহরণ টানা যাক, ধরণ আপনার পেয়ার সেট EUR/USD যা আগে ছিল 1.3456 এবং পরিবর্তন হয়ে দাঁড়ালো 1.3450 তাহলে 3456-3450=6 অর্থাৎ 6 পিপস মার্কেট পরিবর্তন হয়েছে, অথবা আগে ছিল 1.3450 পরিবর্তন হয়ে 1.3456 হয়েছে, তাহলে 3456-3450=6 এক্ষেত্রেও 6 পিপস মার্কেট পরিবর্তন হয়েছে বুঝাবে। এখানে মনে রাখতে হবে দশমিকের পরের চার ঘরের যে পরিবর্তন ঘটে সেটাই পিপস এর পরিবর্তন। যদিও অনেকেই পিপ কে পয়েন্ট বলে, এটি আন্তর্জাতিক মণ্ডলে পিপ নামেই সুপরিচিত।

পিপেটিস 

আপনি যখন ফরেক্স-এ ব্যবসা করবেন তখন কোন ব্রোকার আপনাকে তার আন্ডারে ব্যবসার সুযোগ স্রৃষ্টি করে দেয়। কোন কোন ব্রোকার তাদের হিসাব পাঁচ দশমিক পর্যন্ত করে, অর্থাৎ দশমিকের পর পাঁচ ঘর পর্যন্ত হিসাব হয়, সে ক্ষেত্রে তাকে "পিপেটিস" বলে। ধরুণ, 1.23453 থেকে পরিবর্তন হয়ে 1.23456 হল, তাহলে 23456-23453= 3 পিপেটিস, বিষয়টি এমন।
এরপর থাকছে, লট/ভলিউমের ধারণা জানতে এখানে ক্লিক করুণ
আধুনিক বিশ্বে এখন ব্যবসা বাণিজ্যের অনেক প্রসার ঘটেছে, যার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বেচা-কেনা বা ফরেক্স অন্যতম। আজ এ পর্যন্তই, কিন্তু এ ব্যবসাটি সম্পর্কে আরও জানার বাকি থেকে গেল, যা নিয়ে আমি হাজির হবো পরবর্তী লেখায়। 

মিছবাহ ফারাজী

 

Comments

Popular posts from this blog

ঘরে বসে মার্কেটিং

ফরেক্স' এ লট বা ভলিউম নিয়ে কথা

লিখালিখি